শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৩০ অপরাহ্ন

৭০ বছর পর কুদ্দুস পেলেন তার পরিবারের খোঁজ

রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারুইপাড়ার আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী ৭০ বছর পর আপন ঠিকানাসহ প্রিয়জনদের খুঁজে পেয়েছেন। খুঁজে পাবার পর স্বজনরা জানান, ছেলের আশায় এখনও পথ চেয়ে আছেন আব্দুল কুদ্দুসের শতবর্ষী মা। আর খুব শিগগিরই দেখা হতে যাচ্ছে মায়ের সাথে ছেলের।

৭০ বছর আগে পুলিশ সদস্য চাচার সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রাজশাহীর বাগমারায় বেড়াতে এসে হারিয়ে যান ১০ বছর বয়সী আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর তাকে না পাওয়া গেলে, পরিবারের সদস্যরা মনে করেন সম্পত্তির লোভে পিতা-মাতার একমাত্র পুত্র সন্তান আব্দুল কুদ্দুসকে বেড়াতে নিয়ে যাবার নাম করে হত্যা করেছে তার চাচা।

৭০ বছর পর হারিয়ে যাওয়া সেই আব্দুল কুদ্দুস মুন্সিকে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার। ১০ বছরের সেই ছোট্ট শিশুটি আজ ৮০ বছরের বৃদ্ধ। দিন দশেক আগে আইয়ূব আলী নামের পরিচিত একজনের ফেসবুক আইডিতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন আব্দুল কুদ্দুস। সেখানে তিনি শুধু পিতা-মাতা ও নিজ গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আব্দুল কুদ্দুসকে খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যরা।

আব্দুল কুদ্দুসের স্বজনরা জানান, এখনও জীবিত আছেন তার শতবর্ষী মা ও এক বোন। এরই মধ্যে মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথাও বলেছেন আব্দুল কুদ্দুস। আর এত বছর পর নিজের পরিবার খুঁজে পাওয়ায় খুশি আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী-সন্তানরাও।

আইয়ুব আলী বলেন, গত ১২ এপ্রিল আব্দুল কুদ্দুসের ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও আমার ফেসবুক পেজে আপলোড করি। আর ফেসবুকে ওই পোস্টের উপরে লিখে ছিলাম যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবিনগর থানার এই বৃদ্ধা আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে হারিয়ে গিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। কেউ যদি তার কথা শুনে চিনতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, তারপর বহু মানুষ সেই পোস্ট শেয়ার করেন। বিদেশে কিছু মানুষ ওই এলাকার আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন তারা দেখেন। তারপরে ওই এলাকার মানুষ ফেসবুকে আব্দুল কুদ্দুসের ভিডিও শুনে ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুসের সন্ধান পান তার পরিবারের মানুষ।

আব্দুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের জানান, আমার চাচা পুলিশ তার সাথে বাগমারা থানায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বেড়াতে এসে হারিয়ে যায়। তারপরে আত্রাই সিংসাড়া গ্রামে কোনভাবে চলে আসি। তার পরে বাগমারা বারুইপাড়া গ্রামে এক মেয়ের সাথে বিয়ে হয়। তিন ছেলে ও এক মেয়ে হয়। এ নিয়ে এখানেই আমার বসতবাড়ি হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আমার মায়ের সাথে ভিডিও কলে প্রথম যখন কথা বলি তখন আমার মা আমাকে বলে তুই আমার হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুস বাবা। তোর ছোট বেলায় হাত কেটে গিয়েছিল। মায়ের মুখে এ কথা শুনার পরে আমি বলি, মা তোর কুদ্দুসের কোন হাত কেটে গিয়েছিল, তখন মা বলে বাম হাতের বুড়া আঙ্গুলের কেটে গিয়েছিল, তখন আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। আর বুঝতে পারি যে আমার মা সেই।

এদিকে হারিয়ে যাবার ৭০ বছর পর পরিবারের সাথে যোগাযোগের বিষয়টি আলোড়ন ফেলেছে আব্দুল কুদ্দুসের বর্তমান আবাস বাগমারার বারুইপাড়া গ্রামেও। চায়ের দোকান থেকে পাড়ামহল্লার মোড়ে মোড়ে মানুষের মুখে মুখে ফিরছে আব্দুল কুদ্দুসের গল্প।

সব ঠিক থাকলে আজ শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মায়ের সাথে দেখা করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি। ৭০ বছর পর মা ফিরে পাবেন তার যক্ষের ধন, আর ছেলে পাবেন মায়ের পরশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com